৩৮ তম বিসিএস জনপ্রশাসন ক্যাডারে সুপারিশকৃত জসিম উদ্দীনের আবেগময় স্ট্যাটাস - দৈনিক নতুন সংবাদ

Breaking

a

Wednesday, July 1, 2020

৩৮ তম বিসিএস জনপ্রশাসন ক্যাডারে সুপারিশকৃত জসিম উদ্দীনের আবেগময় স্ট্যাটাস



মোঃ সবুজ পাটোয়ারী,নিজস্ব প্রতিনিধিঃ আলহামদুলিল্লাহ, (সকল প্রশংসা একমাত্র আল্লাহ তাআলার) ।  ধন্যবাদ আমার সকল শিক্ষক/শিক্ষিকা, এলাকার গুরুজন, আমার সহপাঠী বন্ধু/বান্ধবী, ছোট ভাই বোন এবং পরিচিত ও অপরিচিত সকল শুভাকাঙ্ক্ষীদের। আমি ৩৮ তম বিসিএস এ প্রশাসন ক্যাডার (সহকারী কমিশনার ও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট/সহকারী সচিব) হিসেবে সুপারিশ প্রাপ্ত হয়েছি।এটা এখনও পর্যন্ত অর্জিত আমার জীবনের সর্বোচ্চ সাফল্য। এই সাফল্যের পিছনে অনেক গুলো মানুষের অবদান রয়েছে। আমি তাদের কাছে ঋণী। তবে আমি তাদের সেই ঋণ পরিশোধ করতে চাইনা!! আমি চাই আমৃত্যু তাদের নিকট ঋণী থাকতে এবং শ্রদ্ধাভরে তাদের  প্রাপ্তির আশাহীন সেই ঋণ স্মরণ করতে। আমি শ্রদ্ধাভরে স্মরণ করতে চাই তেগুরিয়া উচ্চ বিদ্যালয়ের কিছু মহান ও আদর্শ শিক্ষকের ও তৎকালীন ম্যানেজিং কমিটির সদস্যদের ঋণের কথা। আবু তাহের বিএসসি, বিএড. ও জোসনা খালাম্মা আমার দ্বিতীয় বাবা ও মা। জসিম স্যার, আমেনা বেগম, সাইফুল স্যার, মালেক স্যার, বনি আমিন স্যার আপনাদের কাছে আমি সবসময় ঋণী থাকতে চাই। ঐ স্কুলে আমি সবচেয়ে বেশি গুরুত্ব দিতাম একজন ব্যক্তিকে আর তিনি হলেন সুলতান আহমেদ পাটোয়ারী,একজন ব্যাক্তির কথা এই মুহূর্তে স্মরণ না করলে আমি সত্যিই স্বার্থপর, তিনি শ্রদ্ধেয় আব্দুর রব স্যার ( He is a man of principles) তিনি আমায় সাফল্যের সিড়িতে পদার্পণ করিয়েছিলেন। স্যার আমি গর্বিত যে আমি আপনার মতো একজন শিক্ষক পেয়েছিলাম। আরও অনেকের নামই এখানে হয়তো বাদ পরেছে তবে আমি সবার নিকট চিরকৃতজ্ঞ। আমার জন্য আপনারা দোয়া করবেন। আমিও আপনাদের জন্য দোয়া করি।

আমার পরিবারের সদস্যরা কে আমার জন্য কি করছেন এখানে সেগুলো উল্লেখ করে আপনাদের ঋণের অপমান করতে চাইনা। আমি সবসময় আপনাদের পায়ে এবং বুকে ঠাই চাই।

আমি ৩৫ বিসিএস প্রিলি ফেইল করে আদা জল খেয়ে লাগলাম ৩৬ এ ক্যাডার হবো।তাই ফেইসবুক,জিমকরা,কক(coc) আমার প্রিয় খেলা সহ সব কিছু বন্ধ করে দিলাম।খুব ভালো প্রিলি দিলাম, ৩৬এর জন্য রিটেনের বই কিনলাম। কিন্তু ফেইল! ৩৭ তেও একই অবস্থা হওয়ার পর নিজেকে অস্তিত্বহীন মনে হয়েছে। শুধু বিসিএস এসকে টার্গেট করায় কোন ব্যাংকেও ভালোভাবে টিকতে পারিনি। দেখা গেছে প্রিলি পাস তো রিটেন ফেইল, আবার রিটেন পাস তো ভাইবা ফেইল। ইতোমধ্যে আমি বিয়েটাও করে ফেলার কারণে আমার ওয়াইফ প্রথম দিকে সান্ত্বনা দিতো কিন্তু ধীরে ধীরে আমার এ ব্যর্থতায় সে নিজেই অশান্ত হয়ে গেল। শুরু হলো বাঁশডলা পর্ব।

ফেইল এর এই মহাসিরিজের প্রতিটা এপিসোডে আমার আত্মীয়স্বজনরা খুবই হতাশ হতেন। বিশেষ করে আমার আম্মা ও আমার স্ত্রী। আমার স্ত্রী সব সময় আমায় উৎসাহিত করতো তবে সেটা নেগেটিভ ওয়েতে। যেমন: প্রতিবারই খুব আগ্রহ নিয়ে জিজ্ঞেস করতো রেজাল্ট কি হয়েছে? উত্তরে প্রথম দিকে অজুহাত দেখাতাম কিন্তু পরের দিকে দেওয়ার মতো কোনো অজুহাত খুজে না পেয়ে চুপ করে থাকতাম। আর তখন সে বলতো "তুমি না ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশোনা করছো! কি করতে যে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশোনা করেছ!! এর চেয়ে টেকনিক্যালে পরলে আরও আগে জব হতো। তুমি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কে অপমানিত করছ।

তবে বলে রাখা ভালো আমার ওয়াইফ একজন গভমেন্ট সার্ভিস হোল্ডার(নার্স) । বেচারি নিজে চাকরিজীবী হয়েও আমার মতো বেকার কে বিয়ে করেছেন।

ইতোমধ্যেই দেওয়ার মতো নতুন অজুহাত আবিষ্কার করে ফেলি। তখন বলতাম "ধৈর্য্যের ফল সুমিষ্ট হয়।" প্রথম প্রথম ভালো কাজে দিতো। কিন্তু তার সহকর্মী বা ওয়ার্কপ্লেসে আসা মানুষ জনরা যখন তাকে প্রশ্ন করতো "আপনার হাজব্যান্ড কি করে" তখন জবাবে বেকার বললে বিভিন্ন জন বিভিন্ন মন্তব্য করতো, যা তার ধৈর্য্যের পারদ উবে দিলো। মাঝে মাঝে এমন কথা বলতো যা শোনার জন্য মোটেও প্রস্তুত থাকতাম না। কিন্তু মেনে নিতাম এই ভেবে যে, সেতো একটা বিশাল স্বপ্ন নিয়ে আমায় বিয়ে করেছিল। আজ আমার বেকারত্ব তাকে বিশাল অনিশ্চয়তায় ফেলে দিয়েছে। এটা সত্যিই দুঃখজনক।

ব্যার্থতার এই বৃত্ত থেকে বের হতে না পেরে কয়েক বার সুইসাইড করবো ভাবলাম। কিন্তু যতবারই পদক্ষেপ নিয়েছি ততবারই আমার মেয়ের কথা মনে পরাতে কাপুরুষের মতো ফিরে এসেছি।

এর মধ্যে ৩৮ এর জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছি। আমার ওয়াইফ বলতো আর কত? এবার থাম। তোমার ধৈর্য দেখে আমি খুবই আশ্চর্যান্বিত। আল্লাহ তোমায় আরও ধৈর্য দিক। ওকে বলেছিলাম, এবার যদি না পারি তবে আমার সকল সার্টিফিকেট ছিরে ফেলবো। তবে আমার ফ্যামিলির তিন জন ব্যাক্তি আমায় পজিটিভলি খুব সাপোর্ট দিয়েছেন। একজন আমার বাবা (তিনি প্রতিবারই রেজাল্ট শুনে বলতেন ঠিক আছে দুঃখ করিসনা পরের বারের জন্য চেষ্টা কর)দ্বিতীয় জন আমার মেঝ ভাই, তিনিও বাবার কথাই বলতেন।তৃতীয় জন ছোট ভাই রাজু (৩৯ তম বিসিএস স্বাস্থ্য ক্যাডার) ও বলতো "ভাই ডাই হার্ড পরিশ্রম করেন আর ধৈর্য ধারণ করেন, All good things to those who wait." ওর এই কথাটা আমার খুব ভালো লাগতো। আল্লাহর কাছে চাইলাম দুটি জিনিস: ১.আল্লাহ যদি আমি সত্যিই ক্যাডার হওয়ার যোগ্য হই তবে ৩৮ এ যেন সেটা হই, ২.আর যদি ক্যাডার হওয়ার হওয়ার যোগ্য না হই তবে যেন রেজাল্ট এর আগেই আমার মৃত্যু হয়। অনেকে হয়তো এটা মজা হিসেবে নিবেন তবে এটা আমি প্রায় নামাজে চাইতাম। সত্যিই সৃষ্টিকর্তা আমায় শুনেছেন। আলহামদুলিল্লাহ। ৩৮ বিসিএস প্রিলি, রটেন এবং কাল সর্বশেষ ভাইবার রেজাল্টেও সফল হলাম।

ইতোমধ্যে পূবালী ব্যাংকে আমার একটা চাকরি হয়।সিদ্ধান্ত নিয়েছিলাম জয়েন করবোনা। কারণ ব্যাংকে জয়েন তারিখ ২০/১০/১৯ আর বিসিএস ভাইবার তারিখ ৩০/১০১১৯.কিন্তু আব্বা, আম্মা এবং ওয়াইফ বললো ব্যাংকে জয়েন তোমাকে করতেই হবে। অতএব নিরুপায় হয়ে জয়েন করি। এবং ব্যাংক থেকে 29.10.2019 এক দিনের ছুটি নিয়ে ভাইবা দিতে যাই। 31.10.2019 যথারীতি অফিস করি।
৪০ তম প্রিলি পাস করি কিন্তু চাকরির কারণে রিটেন দেইনি। ৪১ তমতে অ্যাপলিকেশনও করিনি। আল্লাহ উত্তম রিযিক দাতা।

No comments:

Post a Comment